আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার নিশ্চিতে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি আদিবাসী ও দলিত প্রতিনিধিদের

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
 
আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার নিশ্চিতে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি আদিবাসী ও দলিত প্রতিনিধিদের
 
ঢাকা, ০৯ মে ২০১৯: আদিবাসী ও দলিতদের উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিতে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন অথবা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনেই আদিবাসী ও দলিত বিষয়ক আলাদা সেল গঠন এবং আদিবাসী ও দলিত সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন আদিবাসী ও দলিত নেতৃবৃন্দ। আজ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সরকারি সেবাসমূহে অন্তর্ভুক্তি’ বিষয়ক এক অ্যাডভোকেসি সভায় এসব দাবি জানান আদিবাসী ও দলিত নেতারা। সম্প্রতি টিআইবি’র উদ্যোগে পরিচালিত ‘বাংলাদেশের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী: অধিকার ও সেবায় অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণার প্রেক্ষিতে এই অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করা হয়। 
সভায় টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, রাজশাহীর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, অভিযানের নির্বাহী পরিচালক বনানী বিশ্বাসসহ দেশের বিভিন্ন আদিবাসী, দলিত ও চা শ্রমিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বেসরকারী ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া। 
অ্যাডভোকেসি সভায় টিআইবি’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য ইতোপূর্বে পেশ করা ১৩ দফা সুপারিশের সাথে একমত হয়ে আদিবাসী, দলিত ও চা শ্রমিক প্রতিনিধিরা আরো কিছু দাবি তুলে ধরেন। সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- সরকারী কর্ম কমিশনের প্রশিক্ষণ নীতিমালায় আদিবাসী ও দলিতদের বিষয় অন্তর্ভুক্তি করা, আদিবাসী ও দলিতদের জন্য পৃথক ব্যাংক ঋণ নীতিমালা গ্রহণ করা, রাষ্ট্রীয় গেজেট তালিকায় বাদ পড়া বিভিন্ন আদিবাসী ও দলিত গোষ্ঠীকে তফসিলভুক্ত করা, আদিবাসী ও দলিতদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, ধর্ষণ ও সম্পদ দখলের মামলাসমূহ দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনা, সংসদে আদিবাসী ও দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা, চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য বন্ধ করা, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন সরকারী কমিটিতে আদিবাসী ও দলিতদের অন্তর্ভুক্ত করা, সমতলের আদিবাসী ও দলিতদের জন্য অর্থসহায়তা আরো বৃদ্ধি করা, চা শ্রমিকদের লিখিত স্বীকৃতি প্রদানসহ তাদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি। 
সভায় জাতীয় আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “বিদ্যমান ব্যবস্থায় আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। আদিবাসী ও দলিতদের বিষয়ে রাষ্ট্র স্পষ্টত সংবিধান লংঘন করছে। এমনকি আদিবাসী ও দলিতদের সাথে উপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে আচরণ করা হচ্ছে। তাই এধরনের গবেষণা আমাদের অ্যাডভোকেসি ও  আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করবে।”
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, রাজশাহীর সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, “আদিবাসীরা নানা ধরনের বিপদের মধ্যে আছে। আমাদের ৭৫ ভাগ সম্পদ হরণ করা হয়েছে। এমনকি কোম্পানীর নামেও আদিবাসীদের হাজার হাজার বিঘা জমি দখল করা হয়েছে। তাই আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের আদিবাসী-বাঙ্গালী ঐক্য দরকার।” 
আর ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আদিবাসী ও দলিতদের বিষয়ে এক ধরনের সংবেদনশীলতা তৈরি করা। আন্দোলনের ধারা পরিবর্তন হওয়ায় এখন তথ্যনির্ভর আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে সেসব তথ্য তুলে আনার চেষ্টা করেছি। আমাদের বিশ্বাস, রাষ্ট্র আদিবাসী ও দলিতদের সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।” 
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে টিআইবি’র গবেষণায় পেশকৃত সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আদিবাসীদের পৃথক জাতিস্বত্ত্বা এবং দলিতদের পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান; খসড়া বৈষম্য বিলোপ আইন চূড়ান্ত করে এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা; সকল আদিবাসী এবং অবাঙ্গালী দলিত শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যবই প্রণয়ন ও পাঠদানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা; সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদিবাসী ও দলিতদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে সেবাপ্রদানকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চা পরিবর্তনের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন এবং তাদের জমির মালিকানা সমস্যার কার্যকর নিষ্পত্তি; আদিবাসী ও দলিতদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও মর্যাদার উন্নয়নে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা কার্যকর করতে জনঅংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কাঠামো তৈরি ও সেগুলোর চর্চা নিশ্চিত করা। 
 
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
 
শেখ মন্জুর-ই-আলম
পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন)
মোবাইল: ০১৭০৮৪৯৫৩৯৫
ই-মেইল: manjur@ti-bangladesh.org
 

Press Release