জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের জন্য অংশগ্রহণমূলক করতে সমান ক্ষেত্র অপরিহার্য; নির্বাচনী আইনের সংস্কার ও কঠোর প্রয়োগের আহবান টিআইবি

ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩: সবার জন্য সমান ক্ষেত্র (level playing field) নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা হলে বিদ্যমান সংসদ সদস্যদের সম্ভাব্য প্রভাব, প্রশাসনে বিতর্কিত রদবদল ও পদোন্নতি এবং জেলা প্রশাসকদেরকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত, নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশীশক্তির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের জন্য অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনী আইনের সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের পাশাপাশি বিদ্যমান নির্বাচনী আইন ও বিধির কঠোর প্রয়োগের আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

‘কার্যকর নির্বাচন কমিশন: অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপনের জন্য ব্র্যাক সেন্টার ইন এ আজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানিয়ে টিআইবি বলেছে, বিগত বছরগুলোতে (২০০৭ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) কমিশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের ব্যাপকতার কারণে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এককভাবে তার কাঙ্খিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান, টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। সংবাদ সম্মেলনে সমপ্রতি বিএনএফ-এর নিবন্ধন, প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত ৯১-ই ধারা বাতিলের সুপারিশ, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে পক্ষপাতিত্ব, নির্বাচনী প্রচারণায় মন্ত্রী-সাংসদদের বিশেষ সুবিধা দেয়া, নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও ইভিএম ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিতর্কের উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হয় এমন কোনও বিতর্কিত উদ্যোগ না নেওয়া ও দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে নির্বাচনী আইন ও বিধির প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানানো হয়।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন ইতিবাচক অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে কমিশনের অধীন নিয়ে আসা এবং আর্থিক স্বাধীনতা কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের নির্দেশক। অন্যদিকে একীভূত কর্মী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনবল ব্যবস্থাপনার সংস্কার আরেকটি অগ্রগতি। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায় সর্বোচ্চ সংখ্যক স্থানীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ভাবে আয়োজন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজস্ব ও দক্ষ জনবল ব্যবহার ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে। তথ্য প্রকাশের ধারার সূচনা ও বিভিন্ন সংস্কার প্রক্রিয়ায় সব স্টেকহোল্ডারকে সম্পৃক্ত করাও অন্যতম অগ্রগতি। নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনী আইন ও প্রক্রিয়া সংস্কার এবং বাস্তবায়ন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সীমানা পুননির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের তদারকি কাঠামো প্রবর্তন ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সকল ধরণের নির্বাচনী কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে একটি দক্ষ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে ১৩ দফা সুপারিশ করে টিআইবি। উল্লেখযোগ্য সুপারিশ সমূহের মধ্যে রয়েছে-জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের নিজস্ব জনবল ব্যবহার, রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান, নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী তিনমাস পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সময়ে অভিযুক্ত এমন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কমিশনের অধীনে রাখা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ পদ্ধতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সাংবিধানিক অঙ্গীকার অনুযায়ী আইন প্রণয়ন এবং সংশোধিত সংবিধানের আলোকে নির্বাচনী আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা,নির্বাচনকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করা ইত্যাদি। তথ্য প্রকাশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন, পুননির্ধারিত নির্বাচনী আসনের ভোটার সংখ্যাসহ তালিকা, নির্বাচনী মামলা সংক্রান্ত তথ্য, নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত সংলাপের ফলাফল বা সারাংশ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সার্বিক তথ্য, নির্বাচন কমিশন বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মনিটরিং ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং নির্বাচন কমিশনের বিস্তারিত বাজেট, বার্ষিক আর্থিক বিবরণীসহ সকল আর্থিক দলিল প্রকাশের আহবান জানানো হয় প্রতিবেদনে।

এছাড়া বার্ষিক ভিত্তিতে সংসদ সদস্যদের আর্থিক তথ্য ও দলের আর্থিক তথ্য প্রকাশ, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চা ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহবান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, টিআইবি ২০০৬ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ২০০৬ সালে নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে টিআইবি ২০০৬ সালে প্রথম একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ (২০০৯), রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা (২০০৯), এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে তৃণমূলের অংশগ্রহণ (২০১০) বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তমান গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রণীত হয়েছে।

গণমাধ্যম যোগাযোগ:
শেখ মনজুর-ই-আলম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭০৮৪৯৫৩৯৫
ই-মেইল: manjur@ti-bangladesh.org


Press Release