জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর: প্রশ্নবিদ্ধ ক্রয়প্রক্রিয়া; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মানদণ্ডের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন: টিআইবি

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০২৫: “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর” গঠনের উদ্দেশ্যে গণভবনে প্রায় ১১১ কোটি টাকার নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির নামে যেভাবে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, সরকারি অর্থ ব্যয়ে ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেভাবে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা এড়িয়ে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির যুক্তিতে কাজ দেওয়া হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জাদুঘরের রূপান্তরের কার্যক্রম সমাপ্ত করতে যে ধরনের নির্মাণ বা সংস্কারকাজ করতে হবে, সেই কাজ হবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে, অর্থাৎ দরপত্র ডাকা হবে না। মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। দরপত্র ছাড়া এ ক্রয়প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অভ্যুত্থানের স্মৃতিচিহ্ন, শহীদদের স্মারক ও আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অর্থাৎ গণভবনকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর করার প্রশংসনীয় উদ্যোগটি এখন প্রশ্নের মুখে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত, জরুরি অবস্থা, আকস্মিক দুর্যোগ, বিশেষায়িত কোনো পণ্য/সেবা বা বিশেষ পরিস্থিতিতে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে সরকারি ক্রয়ের বিধান রয়েছে, যেখানে দ্রুত পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা প্রয়োজন হয়। সরকারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জাদুঘরের রূপান্তরের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই গৃহীত হয়েছিল এবং ক্রয়নীতি অনুযায়ী উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার জন্য দরপত্র ডাকাসহ যথাযথ নীতি অনুসরণের জন্য সময়ও হাতে ছিল। অথচ প্রায় সাত মাস সময় পার করে নির্ধারিত সময়সীমার তিন সপ্তাহ আগে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি বেছে নিয়ে সরকারি ক্রয় বিধিমালার ৭৬(১) ও ৭৬(২) ধারাকে পাশ কাটানো হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির ব্যবহার কোনোভাবেই অবাধ প্রতিযোগিতা এড়াতে বা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শনের জন্য করা যাবে না এবং এই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এর প্রয়োগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

ড. জামান আরো বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রক্রিয়াটি কোনো বিশেষায়িত ক্রয় নয়। এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক (ইএম) এবং পূর্ত খাতের প্রায় ১১১ কোটি টাকার কাজ দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, নিয়মিত এ ক্রয়ের জন্য কেন সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে? এ কাজের জন্য যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হলো তা কীসের ভিত্তিতে? কোন যুক্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচিত করা হলো; কার্যাদেশের মূল্য নির্ধারণের ভিত্তিই-বা কী? এ ক্ষেত্রে ব্যয়িত অর্থের “ভ্যালু ফর মানি” কীভাবে নিশ্চিত হবে? এ প্রশ্নসমূহের যথাযথ উত্তর ছাড়াই এভাবে কাজ দেওয়ায় প্রক্রিয়াটি কী যোগসাজসমূলক এবং পক্ষপাতদুষ্ট— এমন প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। এত বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে কোনো উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া কাজ প্রদান করায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ ও সদ্ব্যবহারের প্রশ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘একদিকে যেখানে সরকার দুর্নীতি দমনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের অভীষ্টের কথা বলছে, সেখানে সরকারি ক্রয়ে এ ধরনের মূলনীতি লঙ্ঘন আত্মঘাতী ও স্ববিরোধী। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর যথেষ্ট সময় থাকার পরও কেন বিলম্ব হলো, দরপত্র ছাড়া কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন কেন হলো, পুরো বিষয়টি কি উদ্দেশ্যমূলক— এ ধরনের প্রশ্নের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি জানাই আমরা। টিআইবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, দুর্নীতিবিরোধী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহারে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত না হলে, সকল সংস্কার ও উত্তরণের কথা কেবল লোকদেখানো হয়েই থাকবে, যার ফল হবে দুর্নীতিকে স্বাভাবিকতা প্রদানের ধারাকে অব্যাহত রাখা ও উৎসাহিত করা।’

গণমাধ্যম যোগাযোগ:
মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭১৩-১০৭৮৬৮
ই-মেইল: tauhidul@ti-bangladesh.org

Read in English

July Uprising Memorial Museum: Questionable Procurement Process; Unacceptable Breach of Transparency and Accountability Standards: TIB


Press Release