ঢাকা, ১৪ জুলাই ২০১৫: ফৌজদারি অপরাধ করলেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না মর্মে একটি বিধান সংযোজন পূর্বক সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৫ এর খসড়া গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবিধান বিরোধী উক্ত বিধানটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী একই অপরাধের জন্য কোনো বিশেষ শ্রেণির জন্য বিশেষ মাপকাঠি প্রয়োগের সুযোগ নেই। প্রস্তাবিত বিধানটি সংবিধান প্রদত্ত সকল নাগরিকের সমান অধিকারের অঙ্গীকারের পরিপন্থী। বিশেষ একটি শ্রেণি ও পেশার মানুষকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে প্রস্তাবিত সরকারি কর্মচারী আইনে বৈষম্যমূলক যে বিধান রাখা হয়েছে তা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী’ এই ধারণার লংঘন। যার ফলে সরকারি খাতে দুর্নীতেকে প্রশ্রয় দেওয়া ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে উৎসাহিত করা হবে।”
তিনি বলেন, “ঔপনেবেশিক আমলের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা এবং বাংলাদেশ দ-বিধির ১৯৭ (১) ধারার উদাহরণ টেনে সরকারি চাকুরীজীবীদের আলাদা মর্যাদা প্রদানের ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে তা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৫ এর বিতর্কিত বিধানটিই শুধু নয় বরং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ এবং বাংলাদেশ দ-বিধির ১৯৭ (১) ধারাকেও বাতিল করতে হবে, কারণ তা সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদের মর্মবাণীর সাথে সাংঘর্ষিক। ”
ড. জামান বলেন, “সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি আইন প্রণয়নে ৪৪ বছর বিলম্ব হওয়ার পর এমন একটি বিতর্কিত ও পশ্চাদমুখী বিধানের অন্তর্ভুক্তিতে জনগণ বিস্মিত। কারণ ফৌজদারি মামলায় এমনকি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীবর্গসহ সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া ইতোপূর্বে উচ্চ আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ এর অনুরূপ সুবিধা সম্বলিত ৩২ (ক) ধারা সংবিধান পরিপন্থী বলে ঘোষণা করায় গতকাল মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত প্রস্তাবিত সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৫ উচ্চ আদালতের উক্ত রায়ের সাথেও সাংঘর্ষিক।”
সংসদে উত্থাপনের পূর্বে প্রস্তাবিত আইনের পরিপূর্ণ খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের মতামতসহ জনমত যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত বলে টিআইবি মনে করে।