আসন্ন কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবির ক্রমবর্ধমান অনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান গ্রহণের আহ্বান টিআইবির

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-৩০) জীবাশ্ম জ্বালানি লবি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের দ্বন্দ্বে দুষ্ট অনৈতিক প্রভাব প্রতিহত এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ-প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের জোরালা ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে বাংলাদেশ জলবায়ু সম্মেলনকে জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের প্রভাবমুক্ত রাখার পক্ষের শক্তিসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশ কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে- এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এবং ২৬০টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এ বছর সম্মেলন আয়োজক দেশ ব্রাজিল এবং ইউনাইটেড নেশনস্ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসি)- এর কাছে তাদের কার্যক্রমে শুদ্ধাচার নিশ্চিত এবং আসন্ন সম্মেলনের আলোচনা ও সিদ্ধান্তগ্রহণ-প্রক্রিয়া থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে একটি উন্মুক্ত চিঠি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে টিআইবি আসন্ন কপ-৩০ এ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক থাকাসহ তাদের প্রতিহত করার আন্তর্জাতিক উদ্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রধান্য দিয়ে জীবাশ্ম লবির প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিবে- এই প্রত্যাশা করি। একইসঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের অনৈতিক প্রভাব প্রতিহত করতে ইউএনএফসিসি এবং সম্মেলনের আয়োজক ব্রাজিলসহ অন্যান্য সমমনা পক্ষের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সম্ভাব্য সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশাকরি আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে শুধু এমন সদস্যগণই অন্তর্ভুক্ত থাকবেন, যারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারসংশ্লিষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং সকল প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি লবির অনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের ক্রমবর্ধমান অনৈতিক প্রভাব নিয়ে বৈশ্বিক নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন। আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কপ-২৯ সম্মেলনে ১ হাজার ৭ শত ৭০ জন জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্ট উপস্থিত ছিলো। যার মধ্যে ৩ শত ৩৯ জনই আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত সরকারি প্রতিনিধি বা ন্যাশনাল নেগোসিয়েটর। এই প্রতিনিধিদের সম্মেলনের মূল আলোচনা কক্ষে এবং গোপন বৈঠকগুলোতে বিশেষ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৮৬৭ জনকে সরকারিভাবে জারি করা “পার্টি ওভারফ্লো” ব্যাজ দেওয়া হয়েছিলো। যার একটি বড়অংশই জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যেমে সম্মেলনে বরাদ্দকৃত সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বাইরে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি লবির প্রতিনিধিত্বকারী অনেক ব্যক্তিকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে সম্মেলনে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের লবিস্টদের জলবায়ু সম্মেলনে এই অধিক মাত্রার উপস্থিতি এবং বিশেষ প্রবেশাধিকার সম্মেলনের সিদ্ধান্তগ্রহণকে প্রভাবিত এবং সম্মেলন-ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বিগত কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবিইস্টরা জলবায়ু পরিবর্তন রোধসংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা (যেমন কয়লা নিষিদ্ধ করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ​প্রসারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ) ব্যাহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্টদের অনৈতিক প্রভাবের ফলে “কোল ফেজ-আউট” বা কয়লার ব্যবহার বন্ধের মতো যুগান্তকারী বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া, বৈশ্বিক তেল ও গ্যাস কোম্পানির প্রতিনিধিরা কার্বন নিঃসরণ হ্রাসসংক্রান্ত অন্যান্য সিদ্ধান্তগ্রহণ-প্রক্রিয়াকে ইতোমধ্যে প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়েছে।

টিআইবির প্রত্যাশা কপ-৩০ একই দোষে দুষ্ট না হয়ে জীবাশ্ম লবির সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সফল হবে এবং কোল ফেজ আউটসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের লক্ষ্যে সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হবে।

গণমাধ্যম যোগাযোগ:
মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭১৩-১০৭৮৬৮
ই-মেইল: tauhidul@ti-bangladesh.org


Press Release