সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশকাল: ০৯ অক্টোবর ২০২৪

প্রেক্ষাপট

উন্নয়ন ব্যয়কে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র নিরসন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মতো বিভিন্ন কার্যক্রমে এই ধরনের ব্যয় করা হয়ে থাকে। ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বছরপ্রতি মোট জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৮ থেকে ৪১ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বল্পমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা - যার মাধ্যমে অধিকাংশ বাৎসরিক উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয় হয়ে থাকে। প্রকল্প সংখ্যা ও বরাদ্দ বিবেচনায় বিগত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) উন্নয়ন পরিকল্পনায় সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কয়েকটি খাত হচ্ছে- পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ইত্যাদি যুক্তি দেখিয়ে বিগত দেড় দশকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ নির্ভর অতি উচ্চ বাজেটের মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি দেশীয় অর্থায়নে বিপুল সংখ্যক সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হয়। বিগত ২০১৩-১৪ অর্থ বছর থেকে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত। এই সময়ে এই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি (এডিপি’র ১৭ থেকে ২৮ শতাংশ) করা হয়।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্প

গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন কর্মসূচিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ২৫৮টি উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ৬৩,২৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়; যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৫৮টি প্রকল্পে মোট ২৭,৮০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং প্রকল্পের সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প (১৪৫টি) সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, যার বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৪,০৭৭ কোটি টাকা। ২০০৯- ১০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মোট উন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ ১৬৯,৪৫০ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০টি জোন, ২২টি সার্কেল, ৬৫টি বিভাগীয় অফিসের (জেলা পর্যায়) মাধ্যমে সারাদেশের ২২,৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক (জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক) উন্নয়নে এডিপির প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক বরাদ্দপ্রাপ্ত সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রবন্ধ/গবেষণায় লক্ষ করা যায়। যার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ, পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকল্প বাজেট অতিমূল্যায়ন, সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি, যথাসময়ে বরাদ্দকৃত বাজেট ব্যয় করতে না পারা, অর্থবছরের শেষ পর্যায়ে খুব দ্রুততার সাথে ব্যয়, বাস্তবায়িত প্রকল্প টেকসই না হওয়া ও ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের চার লেন সড়কের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় ২১-১০০ কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে দুই থেকে নয় গুণ বেশি এবং ইউরোপের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।

গবেষণার উদ্দেশ্য

এই গবেষণার সার্বিক উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়িত সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা করা। সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপে (পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়ন পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ) সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রকৃতি ও মাত্রা বিশ্লেষণ করা, প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ভূমিকা পর্যালোচনা করা এবং গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে এসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের উপায় চিহ্নিত করা।

বিস্তারিত জানতে নিচে ক্লিক করুন-