বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পর গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে মোট চা উৎপাদন হয়েছে ৭৮.৯৫ মিলিয়ন কেজি এবং জিডিপিতে চা শিল্পের মোট অবদান ১৮২৫.২৫ কোটি টাকা। চা শিল্পে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিবন্ধনকৃত মোট চা বাগানের সংখ্যা হচ্ছে ১৬৪টি - যার মধ্যে মূলধারার চা বাগান রয়েছে ১৫৬টি। এ সকল চা বাগানে প্রায় এক ১,২২,৮৪০ জন শ্রমিক রয়েছে - যার মধ্যে ২১৯৯৭ জন শ্রমিক অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছে। এই প্রথাগত চা বাগানগুলো মূলত মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত। এই চা বাগানগুলো ব্রিটিশ আমল থেকে তৈরি করা হয়েছে যেখানে শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে বাগান কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসস্থানে বসবাস করছে, তাদের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সরকারিভাবে বিভিন্ন আইন-কানুন প্রণয়ন ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যেমন সংবিধান, শ্রমনীতি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার, বাংলাদেশ শ্রম আইন, শ্রম বিধিমালা ও শ্রমিক-মালিকের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রেশন, ভবিষ্য তহবিলসহ বিভিন্ন সুবিধাদি দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও অধিকার প্রাপ্তিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যার ফলে চা শ্রমিকদের জীবন মানে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি, নলকূপের পানি পান করা শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি, পূর্বের তুলনায় মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি। চা শ্রমিকদের উন্নয়নে এসব ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন, সভা সেমিনার ও গণ মাধ্যমে এখনও তাদের কর্মপরিবেশ ও অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার তথ্য পাওয়া যায়। তবে এসব তথ্য পাওয়া গেলেও চা শ্রমিকদের সুস্থ কর্মপরিবেশ ও অধিকার প্রাপ্তিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র চলমান বিল্ডিং ইন্টিগ্রিটি ব্লক ফর ইফেকটিভ চেঞ্জ (বিবেক) প্রকল্পে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রীমঙ্গল সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র পরামর্শের প্রেক্ষিতে চা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও অধিকার প্রাপ্তিতে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে বর্তমান গবেষণাটি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করে।
বিস্তারিত জানতে নিচে ক্লিক করুন